বঙ্গবাজারের ভয়াবহ ট্র্যাজেডির রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর নবাবপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০টির মতো গোডাউন ও কয়েকটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এরপর শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের ২৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর তা নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ ও আহত হয়ে ৩২ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রয়েছেন নয়জন।

ঈদের আগে বারবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অনেকেই রহস্যজনক মনে করছেন। দেশের বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাও মনে করি, কেন এত ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। জানা গেছে, ভয়াবহ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর বেশকটি মার্কেট।

সম্প্রতি রাজধানীর ৩৫টি শপিংমল পরিদর্শন শেষে বেশ কটিকে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। একটি মার্কেটে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি; এক বছর আগে এ মার্কেট পরিদর্শন করে ঝুঁকি কমাতে বেশকিছু সুপারিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু মার্কেট কর্তৃপক্ষ একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি। বস্তুত রাজধানীসহ সারা দেশের সব ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট চিহ্নিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে চিহ্নিত মার্কেটগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মৌচাকে প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের কয়েকজন দগ্ধ হয়েছেন। যেহেতু যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, সেহেতু যানবাহনে গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

আগামী এক সপ্তাহ দেশে তীব্র দাবদাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। যেহেতু বাতাসে জলীয় বাষ্প কম, সেহেতু এ সময় কোনো স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের পর তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যায় পড়েন তা হলো পানি সংকট। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সারা দেশের জলাধারগুলো সংকুচিত হচ্ছে; এছাড়া বিদ্যমান জলাধারগুলোর বেশিরভাগ শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

দেশের সর্বত্র জলাধারগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি সেগুলোতে শুষ্ক মৌসুমেও পর্যাপ্ত পানি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নকশাবহির্ভূতভাবে ভবন নির্মাণের বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। কাজেই কেউ যাতে নকশাবহির্র্ভূত ভবন নির্মাণ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম মানা এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকাই যথেষ্ট নয়। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে আতঙ্কে ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কাজেই কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন সময়মতো প্রকাশ করা উচিত; একই সঙ্গে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নেও যথাযথ পদক্ষপ নিতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। এসব অগ্নিকাণ্ডে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।