পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে রুশ দূতাবাসের পরিচালিত একটি স্কুল জব্দ করেছে পোলিশ সরকার। আর এরপরই কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া।

একইসঙ্গে এই ধরনের পদক্ষেপকে ভিয়েনা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছে মস্কো। রোববার (৩০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডের সরকার দেশটির রাজধানী ওয়ারশতে অবস্থিত রুশ দূতাবাসের পরিচালিত একটি স্কুল জব্দ করেছে। আর এরপরই শনিবার দূতাবাস স্কুলের অবৈধ দখলের বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া।

এমনকি পোল্যান্ডের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছে রাশিয়া।

এর আগে পোলিশ রাষ্ট্র-চালিত নিউজ চ্যানেল টিভিপি ইনফো জানায়, শনিবার সকালে ওয়ারশের কিলেকা স্ট্রিটে রাশিয়ান দূতাবাসের স্কুলের বাইরে পুলিশ হাজির হয়। পরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে রুশ কূটনীতিক ও কর্মীদের স্কুলটি থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়।

এই ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেন, দূতাবাসের স্কুলটি পোলিশ রাষ্ট্রের। অন্যদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, দূতাবাসের স্কুলটি দখল করার লক্ষ্যে পোলিশ কর্তৃপক্ষ সেখানে প্রবেশ করেছে।

রুশ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা পোলিশ কর্তৃপক্ষের এই সর্বশেষ শত্রুতামূলক কাজটিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্পর্কিত ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং পোল্যান্ডে রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পত্তির দখল হিসাবে বিবেচনা করছি।’

এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ওয়ারশের এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ পদক্ষেপ সভ্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের কাঠামোর বাইরে বলে বিবেচিত হয় এবং এটি রাশিয়ায় পোলিশ কর্তৃপক্ষ ও পোলিশ স্বার্থের জন্য কঠোর প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি ডেকে আনবে।’

রাশিয়ার তদন্ত কমিটি শনিবার গভীর রাতে টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপে বলেছে, তারা ‘জব্দ করা’ স্কুলের বিষয়ে ‘একটি আইনি মূল্যায়ন’ প্রকাশ করবে। তবে এর বেশি আর কোনও বিবরণ প্রকাশ করেনি তারা।

পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লুকাস জাসিনা রয়টার্সকে বলেছেন, প্রতিবাদ জানানো রাশিয়ার অধিকার কিন্তু পোল্যান্ড আইনের মধ্যে থেকে কাজ করছে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মতামত আদালতের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর তা হলো- এই সম্পত্তিটি পোলিশ রাষ্ট্রের অন্তর্গত এবং রাশিয়া অবৈধভাবে দখল করেছিল।’

পোল্যান্ডে নিযুক্ত মস্কোর রাষ্ট্রদূত সের্গেই আন্দ্রিয়েভ এর আগে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থাকে বলেছিলেন, দূতাবাস স্কুলের ভবনটি একটি কূটনৈতিক স্থাপনা, যা দখল করার অধিকার পোলিশ কর্তৃপক্ষের নেই।

ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে ইতোমধ্যেই বিপর্যস্ত সম্পর্ক আরও খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে এবং ওয়ারশ নিজেকে কিয়েভের অন্যতম কট্টর মিত্র হিসাবে অবস্থান পাকা করেছে। এমনকি কিয়েভের জন্য মিত্রদেরকে ভারী অস্ত্র সরবরাহ করতে রাজি করাতে অগ্রণী ভূমিকাও পালন করছে পোল্যান্ড।

এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত সন্দেহে ৪৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছিল পোল্যান্ড।