দুর্গাপূজার সময় হল খোলা রাখলেও পবিত্র ঈদুল ফিতরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

‘ছাত্রীদের নিরাপত্তার অজুহাতে’ হল বন্ধ রাখার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলের ছাত্রীরা। দুর্গাপূজার সময় হল খোলা রাখলেও ঈদ উপলক্ষে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে ‘বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন তারা।

হলের একাধিক ছাত্রী হল খোলা রাখার ব্যাপারে লিখিত আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জোবেদা কনক খান। তবে হল বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়নি।

ছাত্রীদের অভিযোগ, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে হল বন্ধ রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো নোটিশ দেয়নি। তবে হল প্রশাসন ‘জোরপূর্বক’ বন্ধ রাখছে। ছাত্রীদেরকে রুমে রুমে গিয়ে হল ত্যাগ করার জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রদের হলগুলো খোলা রাখা হচ্ছে। এতে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে মনে করছেন।

সিরাজুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রীরা জানিয়েছেন মঙ্গলবারের (১৮ এপ্রিল) মধ্যে ছাত্রীদেরকে হল ত্যাগ করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হল খোলা রাখার জন্য প্রভোস্ট বরাবর ১৯ ছাত্রীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দিলেও তা হল প্রভোস্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর ছাত্রীদের হল ত্যাগের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও ঈদের পূর্বে তারা হল ত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রভোস্ট মাছুমা আক্তার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, দারিদ্রতার কারণে টিউশনি করাতে হচ্ছে, ছুটিতে গেলে টিউশনির বেতন না-ও দিতে পারে। কিন্তু টিউশনি করিয়েই তো পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। হলের প্রভোস্টকে বলার পরেও তিনি হলে থাকতে দিচ্ছেন না। বন্ধুদের মেসে থাকার জন্য বলেছেন তিনি।

আরেক ছাত্রী বলেন, অনেকের বাড়ি দূরে হওয়ায় ছুটিতে বাড়িতে যেতে পারে না। এ ছাড়া ঈদের পর সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হবে। তাই অনেকে হলে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। হলে থাকার ব্যাপারে আবেদন করলেও প্রভোস্ট তা মঞ্জুর করেননি।

এদিকে দুর্গাপূজার সময় আবাসিক হল খোলা থাকলেও পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আবাসিক হল ‘জোরপূর্বক’ বন্ধ রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ছাত্রী।

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য আইন ও অধিকার সমান। কিন্তু ছাত্রীদের বেলায় তা সবসময় উল্টো। মুখে সম-অধিকার এবং নারী অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তার উল্টোটা হচ্ছে। নানান নিয়ম তৈরি করে তা ছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মেয়ে বলেই হল ছেড়ে দিয়ে মেসে গিয়ে উঠতে হবে।

এ বিষয়ে সহকারী প্রভোস্ট মাছুমা আক্তার বলেন, আমার জানামতে ছাত্রীরা কেউ হলে থাকবে না, তাই হল বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের দু’দিন পর আবার হল খুলে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর হল খোলা রাখার দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।