ব্যাংক থেকে টাকা তুলে পাবনা শহর থেকে সাঁথিয়া ও আতাইকুলায় নিয়ে যাচ্ছিলেন নগদের দুই মাঠকর্মী। পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে তারা হারান সব টাকা। এমন ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী নগদের দুই মাঠকর্মীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি, ছুড়ি ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পাবনা শহরের চকপৈলানপুর (নয়নামতি) এলাকার আহম্মদ উল্লাহ রুমির ছেলে মো. শিস ইসলাম (২২), শালগাড়িয়া এলাকার মো. বানির ছেলে মো. ইয়াছিন আলী ওরফে রাহাত (২১), শালগাড়িয়ার নিকারীপাড়ার আব্দুল বারেকের ছেলে মো. রায়হান হোসেন (২১), ইব্রাহীম আলী মুন্সির ছেলে মো. ইমন হোসেন বাধন (২৪), রজব আলীর ছেলে তানভীর হোসেন (২১), শালগাড়িয়া উত্তরখাপাড়ার মো. মাসুম হোসেনের মো. রনি হোসেন (২২), হেমায়েতপুরের পাককিয়ার মো. মোশারফ হোসেনের ছেলে মো. ইমরান শেখ (২৪) এবং পৌর এলাকার বড়দিকশাইল স্কুলপাড়ার উজ্জল হোসেনের ছেলে তুহিন হোসেন (২৭)।
পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৫ এপ্রিল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন- শিস ইসলাম নগদকর্মী তুহিন এবং ইমরান শেখের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে ছিনতাইয়ের বিষয়টি পরিকল্পনা করেন। এজন্য রাহাতের কাছে অস্ত্রও সরবরাহ করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৪ মার্চ সকালে তারা লোকেশন নির্বাচন করেন। নগদের কর্মী তুহিনের সঙ্গে শিস ইসলামসহ অন্য আসামিরা মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা থেকে বিরত থাকেন।
উদ্দ্যেশ্য তুহিনকে কোনোভাবেই যেন সন্দেহ না হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক তুহিন ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে রওনা দিলে পূর্ব থেকে পাবনা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে অবস্থানকারী শিস ইসলামসহ তার সঙ্গে থাকা রাহাত ও রায়হানকে অপর নগদের কর্মী ইমরান মোবাইলের মাধ্যমে লোকেশন পাঠান। তার দেওয়া তথ্য মতে তুহিন যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার পরপরই শিস ইসলাম, রাহাত ও রায়হান একটি মোটরসাইকেলে এবং তানভীর ও বাধন অন্য একটি মোটরসাইকেলে তাদের পিছু নেয়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থল মাধপুর হাইওয়ে থানার সামনে পৌঁছালে অস্ত্র ঠেকিয়ে তুহিন এবং তার সঙ্গে থাকা নগদের কর্মী ইয়াকুব ইসলাম বিশালের কাছে থাকা ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যান।
পুলিশ সুপার জানান, পরিকল্পনা মোতাবেক শিস ইসলাম, রাহাত ও রায়হান পথ পরিবর্তন করে ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলে যান এবং বাধন ও তানভীর মহাসড়ক দিয়ে পুনরায় পাবনার দিকে যান। পরবর্তীতে তারা আতাইকুলা থানার শ্রীপুর বাজারের পাশে একটি ধান ক্ষেতে এসে মিলিত হন এবং ছিনতাইকৃত টাকা ভাগাভাগি করেন।
এ ঘটনায় ২৮ মার্চ শহরের শালগাড়িয়ার মামুনুর রহমান নামে নগদের এক ডিস্ট্রিবিউটর বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় মামলা করেন। ১৫ এপ্রিল ঘটনায় জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাইয়ে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মোটরসাইকেল আরোহী তিনজনসহ মোট চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ-প্রশাসন) মো. মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান, ডিবির ওসি এমরান মাহমুদ তুহিন, আতাইকুলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফেজ উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।