গত বছর ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাচনের দিন ছিল ‘ক্রীড়াঙ্গনের কালো দিবস’। দুই পক্ষ একমত হয়ে ভোট বর্জন করে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পাঁচ কাউন্সিলরও ভোট না দেওয়ায় সমালোচনা হয়েছিল অনেক। তাই এবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আগের পাঁচ কাউন্সিলরকে বাদ দিয়ে নতুন পাঁচজনকে মনোনিত করেছে। এনএসসি কোটার কাউন্সিলরশীপে চমক ফুটবলের শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান।
ফুটবল বাদে দেশের সকল ফেডারেশনেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান (যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী) পাঁচজন (ক্রিকেটে দশজন) করে কাউন্সিলর মনোনীত করতে পারেন। সাবেক ক্রীড়াবিদ, স্পন্সর ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের খেলার উন্নয়নের স্বার্থে এই কোটায় কাউন্সিলরশীর প্রদান করা হয়। ইমরুল হাসান ফুটবল সংগঠক হলেও তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের প্রায় সকল খেলায় পৃষ্টপোষকতা করে সেই সূত্রেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় তার কাউন্সিলরশীপ। মন্ত্রী মনোনীত অন্য চার কাউন্সিলর হলেন- মাহবুব রব (ফেডারেশনের সাবেক সম্পাদক), জহির উদ্দিন বাবর, আব্দুল আল মামুন (নিশাত) ও আরিফুল হক হাসান।
আজ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর আগামীকাল থেকে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের মনোনয়ন পত্র ক্রয়-বিক্রয় শুরু। ৯৮ ভোটারের মধ্যে ৬৯ জনই জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের। ফলে নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি এই সংগঠনের হাতেই। গত বছর সাধারণ সম্পাদক পদে ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় এদের নেতৃত্বেই ক্রীড়াঙ্গনের কালো দিবস রচিত হয়। এই বছরও তারা একক প্যানেল গড়ার উদ্যোগ নিলেও সেটা ইতোমধ্যে ভেস্তে যাওয়ার পথে।
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের বাকি সকল ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক নির্ভর। এই চেয়ারের দিকেই সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্র করে অনেক ফেডারেশনে অস্থিরতা, দ্বন্দ্ব-কোন্দলও রয়েছে। ব্যাডমিন্টন নির্বাচনও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা ফোরামের সমর্থন আদায়ের জন্য ব্যতিব্যস্ত। দুই সাবেক সাধারণ সম্পাদক জোবায়েদুর রহমান রানা, আমির হোসেন বাহার (বাহার সহ-সভাপতি থেকে সম্পাদক হয়েছিলেন) পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী।
দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গেই পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন ফোরাম নেতৃবৃন্দ। সাবেক তারকা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও সংগঠক জোবায়েদুর রহমান রানাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সমর্থন দিলে কমিটিতে অন্য কোনো পদে তার ঘনিষ্ঠজন কেউ থাকতে পারবেন না এমন কড়া শর্ত দিয়েছে জেলা ও বিভাগীয় সংগঠক পরিষদ। এই প্রস্তাব রানা প্রত্যাখান করেছেন। বরগুনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক আলমগীরকে সাধারণ সম্পাদক ও রানাকে সহ-সভাপতি করে একটি সমঝোতার প্যানেলের পরিকল্পনাও ছিল ফোরামের। রানা এই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নিজে আলাদা প্যানেলে প্রার্থী হলে তখন ফোরাম আলমগীরের পরিবর্তে ফেনীর আমির হোসেন বাহারকে তাদের প্রার্থী করবে।
দুই পক্ষই ইতোমধ্যে প্যানেল গড়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ফোরাম ইতোমধ্যে ৩০ টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বরারবর পে-অর্ডার করেছে। রানাও তার সম্ভাব্য প্যানেল নিয়ে সভা করছেন। ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা না আসলে দুই প্যানেলে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের নির্বাচনের ব্যবস্থা ফোরাম নির্ভর। তাদের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছার ওপরই একটি দেশের ফেডারেশনের নেতৃত্ব নির্ভর করে। অনেক সময় ফোরামের দুই একজন শীর্ষ নেতা খেলার সম্ভাবনা-ভবিষ্যতের বিবেচনায় যোগ্য প্রার্থী বিবেচনা না করে তার/তাদের আনুগত্যের ব্যক্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। এর নির্মম ফল ভোগ করে ক্রীড়াঙ্গন।
এদিকে আজ বিকেলে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে যুব গেমসের খরচ অনুমোদনসহ আনুষ্ঠানিক বিষয়াদি পাস হয়। সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সরদারের সই জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছিল ব্যাডমিন্টন সংশ্লিষ্ট একজনের ওপর। তাকে শুনানীর জন্য দুই দফা ডাকলেও অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি। তাই এই বিষয়টি নির্বাচিত কমিটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার সুপারিশ করেছে অ্যাডহক কমিটি।
বার্তাবাজার/এম আই